১.

হিরাক্লিয়াস তখন ইনতাকিয়া গ্রামে। তার সৈন্যবাহিনী সাহাবাদের সাথে যুদ্ধ করে বারবার পরাস্ত হচ্ছে। কোনোমতেই জয়ী হতে পারছে না। সৈন্যগণ পরাজিত হয়ে যখন তার নিকট এলো, তখন তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাঁরা কি তোমাদের মত মানুষ নয়?’

তাঁরা বললো, ‘হ্যাঁ, মানুষই তো।’

—‘সংখ্যায় ওরা বেশি, না তোমরা?’

—‘আমরাই বেশি। শুধু বেশিই না, সর্বক্ষেত্রে আমাদের সংখ্যা ওদের চেয়ে বহুগুণ বেশি।’

—‘তাহলে তোমরা কেন একের পর এক পরাজয় বরণ করছো?’

—‘আমাদের পরাজয়, আর ওদের বিজয় হচ্ছে এই জন্যে যে—ওরা রাতভর ইবাদত করে, আর দিনভর রোজা রাখে। ওরা প্রতিশ্রুতি পালন করে। সৎ কাজের নির্দেশ দেয়, অসৎ কাজের নিষেধ করে। নিজেদের মধ্যে ইনসাফ ও ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করে। অন্যদিকে আমরা মদপান করি। ব্যাভিচারে লিপ্ত হই। হারাম ও অবৈধ কাজ করি। অঙ্গীকার ভঙ্গ করি। রাগান্বিত হই। জুলুম ও বেইনসাফী করি। আল্লাহর অপছন্দনীয় বিষয় বাস্তবায়নের নির্দেশ দিই। আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট তা থেকে নিজেরাও বিরত থাকি, অন্যকেও বিরত রাখি। আর আমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় ও অশান্তি সৃষ্টি করি।’

—‘তোমরা ঠিকই বলেছ। তাঁরা এমন লোক যাদেরকে প্রতিহত করার শক্তি তোমাদের নেই।’[1]

২.

কিসরা ইয়াজদ্গিরদ পরাজিত হলো। সাহাবারা তার ওপর বিজয় লাভ করলো। কিসরা পরাজিত হয়ে নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য হলো। তার মনের মধ্যে প্রতিহিংসার আগুন দাও দাও করে জ্বলতে লাগলো। সে মনে মনে যে বিজয়ের কল্পনা দেখেছিলো, তা পুরো হলো না। সে হতাশ হলো। যার কাছে সাহায্য চেয়েছিলো, সে বন্ধুও তাকে নিরাশ করলো। কি করবে, না করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

সে ভাবলো চীনে চলে যাবে। চীনের সম্রাট তার বন্ধু। সে নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করবে। সে তার সভাসদকে তার ইচ্ছের কথা জানালো। ওরা বললো, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হলো, আমরা যেন তাদের (সাহাবাদের) সাথে সন্ধি করি। তাহলে তারা আমাদের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেবে। আর এর বিনিময়ে আমরা তাদেরকে কিছু অর্থ (জিজিয়া) প্রদান করবো। তাহলে আমরা আমাদের দেশেই থাকতে পারবো এবং তারা হবে আমাদের প্রতিবেশি। আর তারা হবে আমাদের জন্যে অন্যদের থেকে বেশি হিতাকাঙ্ক্ষী।’

কিসরা সভাসদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো। তারপর চীনের বাদশাহর কাছে সাহায্যের আবেদন করলো। চীনের বাদশাহর কাছে কিসরা যে দূত পাঠিয়েছিলো, বাদশাহ সে দূতের কাছে সাহাবাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাইলো। দূত সাহাবাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বাদশাহকে অবহিত করলো। সাহাবারা কীভাবে যুদ্ধ করে, সালাত আদায় করেন, ইনসাফ করে তার বিস্তর বর্ণনা দিলো।

সব শোনার পর চীনের বাদশাহ কিসরাকে পত্রে লিখলেন,

“আমি তোমার কাছে এমন এক সৈন্যদল প্রেরণ করতে পারি, যার এক প্রান্ত থাকবে মারভে এবং অন্য প্রান্ত থাকবে চীনে। আর এ সেনাদলের ভাগ্যে কী জুটবে তাও আমি জানি না। এ না জানাটা আমার জন্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু যে সম্প্রদায়ের গুনাবলি সম্পর্কে তোমার দূত আমাকে অবহিত করেছে, তারা যদি ইচ্ছে করে তো পাহাড়-পর্বতকে পর্যন্ত সমতল ভূমিতে পরিণত করতে পারে। সুতরাং পরিণিতি একাবারে স্পষ্ট। তুমি তাদের সাথে সন্ধি করো। আর তাদের সাথে সন্ধি করার জন্যে রাজি না থাকলেও রাজি হয়ে যাও।”[2]

আমরা আজ উল্টো পথে হাঁটছি। সাহাবিদের বৈশিষ্ট্য ধারণ না করে, হিরাক্লিয়াসের সৈনিকদের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করছি। হারিয়ে যাচ্ছি দূরে, বহুদূরে...। আর মনে মনে বিজয়ের স্বপ্ন দেখছি। আমাদের বিজয় কীভাবে আসতে পারে?


[1] ইবনু কাসীর, ইসমাঈল ইবনু ওমার, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৬/৩৭

[2] ড. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবি, উমর ইবনুল খাত্তাব, ২/৩৮৬।